রোববার ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লা পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। তবে বিচারক সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য রাখেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু রোববার শুনানিতে বলেন, সাংবাদিক রোজিনাকে জামিন দেওয়া হলে তাদের আপত্তি নেই। তবে তার পাসপোর্ট যেন জমা রাখা হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ওই শর্ত নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকার কথা জানালে বিচারক অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
রোজিনার এ জামিনের মেয়াদ হবে মামলার পরবর্তী তারিখ, অর্থাৎ ১৫ জুলাই পর্যন্ত। ওইদিনই এ মামলায় পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রোজিনার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ও আশফ উল আলম। তাদের সঙ্গে ছিলেন প্রশান্ত কর্মকার ও আমিনুল গণি টিটো।
তবে ভার্চুয়াল শুনানি হওয়ায় রোজিনাকে আদালতে আনা হয়নি। তাকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।
রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে গত ১৭ মে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।
পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডিবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
রোজিনা ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর তার সহকর্মীরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাকে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে ব্রিটিশ আমলের এক আইন ব্যবহার করে।
সচিবালয়ে আটকে রাখার সময় রোজিনাকে ‘শারীরিকভাবে হেনস্তা’ করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
তাকে ‘হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের’ প্রতিবাদে সারা দেশেই রাস্তায় নামেন ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা। দেশে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে’ প্রশ্ন তোলেন বিরোধী দলের নেতারা।
সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট- সিপিজে এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) রোজিনাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেয়।
আর জাতিসংঘ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, সাংবাদিকদের ‘হয়রানিমুক্তভাবে’ কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
রোজিনাকে কেন সেদিন দীর্ঘ সময় আটকে রাখা হল, সেই ব্যাখ্যা জানতে চায় বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে মন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, রোজিনা টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি ‘সরিয়েছিলেন’ যেগুলো প্রকাশ হলে ‘দেশের ক্ষতি’ হতে পারত।
আর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ভুল’ রোজিনারও থাকতে পারে, সাংবাদিকদের ‘আবেগপ্রবণ না হয়ে বাস্তবতার নিরিখে’ বিষয়টি দেখা উচিত।
তবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মনে করেন, সেদিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘দায়িত্বশীলরা’ সাংবাদিকদের ‘ব্রিফ’ করলে হয়ত ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হত না।
আর রোজিনাকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসাবে বর্ণনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার সরকার হচ্ছে সংবাদপত্রবান্ধব সরকার। আমরা কখনো আপনাদের নিষেধ করি না। উই হ্যাভ নাথিং টু হাইড। যে ঘটনা ঘটছে, খুব দুঃখজনক ঘটনা।”
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম